জান্নাতুল ফেরদৌস
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

আমি জান্নাতুল ফেরদৌস। নরসিংদীর মেয়ে রাজবাড়ীর বৌ ঢাকায় থাকি। বাবা আতাউর রহমান খান মা রাশিদা খানম। তিন বোনের মধ্যে আমি মেজো। বিবাহিত জীবনে এক ছেলে আর ছেলের বাবা কে নিয়ে ভালই আছি। আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পটা ভিন্ন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএসএস এবং ঢাকা ল কলেজ থেকে এলএলবি বিআইএম থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট কমপ্লিট করে একটা স্বনামধন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ বিভাগে চাকরি করেছি বহু বছর। ছেলেকে স্কুলে দেয়ার পর চাকরিটা আর করা হলোনা। সে ও ১০ থেকে ১২ বছরের কথা। তখন একটা দিন মনে হতো একটা বছরের সমান সময় যেন কাটতেই চাইনা সবসময় কেমন যেন মানসিক একটা চাপ। তখন শুধু মনে হতো যদি ঘরে বসে কিছু করতে পারতাম। অনেক কাজ করতে পারি কিন্তু কি করবো কোনভাবেই আমার বরের ও সায় পাচ্ছিলাম না, যে কারণে করি করি করে ও কিছু করা হয়ে ওঠেনি। তারপর বরের সম্মতি নিয়েই ঠিক করলাম উদ্যোক্তা হবো। পারিবারিক কারনে নিজে চাকরি দিয়েছি, এমন কাজ করবো যেখানে নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। স্বামী,সন্তান,সংসার দেখার পাশাপাশি ঘরে বসে নারীরা কাজ করতে পারবে।
উদ্যোক্তা তো হবো কিন্তু কি নিয়ে কাজ করবো? ভেবে চিন্তে দেখলাম, ছোটবেলা থেকেই পিঠা বানানোটা আমার শখ। আর এটা আমি পারিও। তাই ঠিক করলাম পিঠা নিয়ে কাজ করবো। এতে করে লাভ দুই টা, নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার হাড়ানো ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিলুপ্ত প্রায় পিঠাকে নতুন ভাবে প্রতিস্থাপন করা যাবে। আর বাংলার ঐতিহ্যকে দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরে ও পরিচিত করানো যাবে।
তাই "ঐতিহ্যের সমারোহ পিঠা" এই শ্লোগান নিয়ে বাংলার সব ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত প্রায় পিঠা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। শুরুর দিকটা, পথ চলা এত সহজ ছিলনা। যেহেতু আমি উচ্চ শিক্ষিত তাই আত্মীয়,স্বজন,বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। অনেকে এমন বলেছে জামাই ভালো চাকরি করে, এত শিক্ষিত মেয়ে, এত ভালো চাকরিটা ছেড়ে, দুনিয়াতে এত কাজ থাকতে তাকে কেন পিঠা নিয়ে কাজ করতে হবে? পিঠাতো রাস্তার পাশে পথে-ঘাটে স্কুলের সামনে কত মহিলারা বিক্রি করে। তাকে কেন পিঠা বেচতে হবে? কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। আমি আমার দেশের ঐতিহ্য কে ধরে রাখার জন্য পিঠা নিয়েই কাজ করবো। যে যাই বলুক, অবশেষে আমার স্বামীর সম্মতিতেই দেশের হারানো ঐতিহ্য পিঠা শিল্পকে নিয়ে কাজ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম। যেই কথা সেই কাজ, শুরু করে দিলাম পিঠা নিয়ে কাজ করা।
সেই থেকে আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথমে শুরু করলাম পরিচিতজনের মাধ্যমে। এখন অনলাইনের সুবাদে আমার বানানো নানা রকম পিঠা সারা বাংলার ঘরে ঘরে। এমন কি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও আমার বানানো পিঠা সুনাম কুড়িয়েছে। বিশেষ করে নকশি পিঠা। সজনদের হাতধরে আমার বানানো নকশি পিঠা আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, ভিয়েনা, সৌদি আরব, লন্ডন, সুইডেনে পারি জমিয়েছে। এখন আর মনে কোন আফসোস নেই, চাকরি করতে পারলাম না বলে। আর যারা আমার এ কাজ কে অবজ্ঞার চোখে দেখতো এখন তারা নিজেদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে আশা করি। সামনে পিঠা নিয়ে ব্যপকভাবে কাজ করার ইচ্ছে আছে। ইচ্ছে আছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত প্রায় পিঠাগুলোকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করে বাংলার হারানো ঐতিহ্য পিঠা শিল্পকে ফিরিয়ে আনার। পরেরটা ইতিহাস এখন আমি আপনাদের পিঠা রানি, পিঠা কন্যা, পিঠা আপু এটা যে কত বড় প্রাপ্তি বোঝাতে পারবোনা। এখন অফলাইন ছাড়া শুধুমাত্র অন লাইনে সারা বাংলায় এবং বাংলার বাইরে আমার ৩০০০ + কাস্টমার এদের মধ্য থেকে প্রায় ১০০ শতাংশই আমার রিপিট এন্ড রিপিট কাস্টমার। এই সম্মানিত কাস্টমার দের ভালবাসায় আমার কাজের শক্তি। ইতি মধ্যে ১৫০ বছরের ঐতিহ্য বাহি বিলুপ্ত প্রায় সতীন মোচর পিঠাকে বাংলার মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পেরেছি। এছাড়াও বরিশালের কোন কোন অঞ্চলের বিলুপ্ত প্রায় বস্তা পিঠা নিয়েও কাজ করছি। আশা রাখছি আমার এ কাজে সকল কে পাশে পাব। বড় বোন সুমি আপাই আমার এ পথ চলার অনুপ্রেরণা। আপনাররা সবাই আমার এ পথ চলাতে পাশে থাকবেন এটাই প্রত্যাশা। করবেন । প্রমান করতে পেরেছি কোন কাজই ছোট নয় কাজ তো কাজই। সফলতার জন্য শুধু প্রয়োজন দক্ষতাকে কাজে লাগানোর মনোবল আর ইচ্ছা। আল্লাহ যদি রহমত করে আর যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে পথ চলাটা অনেক সহজ হয়।
Sunny / Sunny

ভর্তার সৃজনশীল প্রকাশ ফারজানা বাতেন এর বই শত ভর্তার ভুবনে

চিংড়ি মাছের তিল ললিপপ

ডিম আলুরচপ

রেনেসন্স ঢাকা গুলশান হোটেল নিয়ে এসেছে রমজানে বিশেষ আয়োজন

মিষ্টি আলুর স্যুপ

রেডি টু কুক

কিভাবে চিনবেন দেশী মাছ দেশী হাঁস

গাজরের ক্ষীরসা পাটিসাপটা

বাঁশপাতা সিদল শুটকির ভর্তা

ক্রিসমাস ফ্রুটস কেক

চকলেট লেয়ার উইথ চকোলেট কেক

ভ্যানিলা কাপ কেক
