ঢাকা বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীদের দখলে

চাঁদাবাজির কারণে কাপ্তান বাজারের মুরগীর বাজার অস্থির


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ১৮-১২-২০২৩ দুপুর ৪:৩৭

 হানিফ ফ্লাইওভারসহ রাজধানীতে ছয়টি ফ্লাইওভার। যানজটের ভোগান্তি কমাতে গড়া এসব ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে এখন শাঁশাঁ গাড়ি চলছে। আর ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাটা নগরবাসীর জন্য হয়ে উঠেছে আরেক ভোগান্তির কারণ। ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা পুলিশের সহযোগিতায় সন্ত্রাসীদের দখলে। 
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কাপ্তানবাজারে পুরো রাতেই চলছে মুরগির পাইকারী দোকান। আবার কোথাও ভাতের দোকান থেকে শুরু করে মাংসের দোকান, টং, ঘোড়া রাখার স্থান, গ্যারেজ, গোডাউন, শৌচাগার-এমনকি থাকার ঘরও তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও বালু-ইট-পাথরের মহাল, ডাম্পিং স্টেশন করা হয়েছে। ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা ভাড়া দিয়ে চাঁদাবাজি ছাড়াও মাদকের রমমনা ব্যবসা চালানো হচ্ছে। এতে জড়িত রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় কাউন্সিলর, থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ছাড়া ঢাকা সিট করপোরেশনের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীরা জড়িত। আর কাপ্পানবাজারে জয়কালী মন্দীর এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুলের নেতৃত্বে এলাকার চাঁদাবাজার রাসেল, গৌরব, রহমান, জুম্মুন ও রাজাকে দিয়ে প্রতিদিন রাতে মুরগীর পাইকারী মার্কেট ও গাড়ি থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। 
অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকায় গভীর রাতে মুরগির বাজারটিতে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কতিপয় চিহ্নিত চাঁদাবাজরা জোরপূর্বক ট্রাক থামিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করছে। যার কারণে ঢাকা শহরের মুরগির বাজারটিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গভীর রাতের এই মুরগির বাজারটি ঘিরে রয়েছে স্থানীয়দের ক্ষোভ। ব্যাপক চাঁদাবাজি আর নানা অনিয়মের কারণে কেজি প্রতি মুরগির দাম বাড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আর  ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা পুরোপুরি এ বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করছে। 
তাছাড়া, চাহিদা অনুযায়ী মুরগি সরবরাহ করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঢাকার কাপ্তানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন গভীর রাতে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত ট্রাকে করে মুরগি আসে কাপ্তান বাজারে। আর সেখান থেকেই পাইকারদের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন বাজারে তা সরবরাহ করা হয়। এই পাইকারি বাজারটিতে ব্যবসা শুরু করা হয় প্রতিদিন রাত মানে ১১টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০ মুরগির গাড়ি -ট্রাক কাপ্তানবাজারে ঢোকে। আর এ সময় ট্রাক প্রতি ২০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। প্রতিদিন গড়ে কাপ্তানবাজারের এই একমাত্র মুরগির বাজার থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এই মোটা অংকের চাঁদার টাকা ত্রিমুখী ভাগ হয়। বেশিরভাগ টাকাটা পায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা। বাকি দুইভাগ পায় স্থানীয় থানা পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পদ বিপণনের কর্মকর্তারা। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, কাপ্পানবাজারে চাঁদাবাজির ভাগ বন্টনের টাকা নিয়ে প্রায় দেখা যায় মারামারির ঘটনা। বাজারে পোল্ট্রি মুরগি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি মো. কাজি বোরহান ।  কাপ্তান বাজারের গভীর রাতের এই মুরগির বাজারটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা থাকলেও তা থাকছে না স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার সহযোগীদের কারণে। এখানে কোন নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত মুরগি ট্রাক কাপ্তান বাজারে প্রবেশ করা মাত্র চিহ্নিত চাঁদাবাজরা ট্রাক থামিয়ে পুলিশের সামনেই চাঁদা আদায় করছে পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।
কাপ্তানবাজারের ক্ষুদ্র মুরগি ব্যবসায়ী তমিজউদ্দিন জানান, বাজারে মুরগির দাম বাড়ে না বাড়ায় এখানকার চাঁদাবাজ ব্যবসায়ীরা। পুরো ঢাকা সিটিতে যত কাঁচা বাজার রয়েছে সব বাজারের মুরগি থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রাক্তন বাজারের রাত্রিকালীন মুরগির বাজার চলে রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। কিন্তু কিছুদিন আগে ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই মুরগির বাজার চলে যায় আনন্দবাজার নিমতলী মেইন রাস্তায়। সেখানে দুই মাস থাকার পর কাপ্তানবাজারের তালিকাভুক্ত দুর্বৃত্তরা সেখানে হামলা চালায়। পরে আস্তে আস্তে আবারও কাপ্তানবাজার মুরগির বাজারটি বসে। গত কয়েকদিন আগে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফির লোকজন চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে প্রকৃত ইজারাদারদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইজারাদার সহ অনেক ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আর চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর লোকজনের সাথে প্রায় সংঘর্ষ ও মারামারি ঘটছে। 
বাজারের পাইকারি মুরগির ব্যবসায়ী সোলেমান জানান,  গভীর রাতে কাপ্তান বাজার এলাকায় শত শত ট্রাক আসে। এসব প্রতি মোটা অংকের চাঁদা তোলা হয়। টাকা না দিলে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী শেখ শামীম, আব্দুর রহমান, ইয়াসিনসহ অনেকে ট্রাক ড্রাইভারদের মারধর করে। আবার কেউ বাধা দিলে তারাও নির্যাতনের শিকার হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ গরীবের টাকা চাঁদাবাজির নেপথ্যে থেকে ইন্ধন যোগান।ওয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম জানিয়েছেন,কাপ্তান বাজার মুরগির ট্রাকে চাঁদাবাজি সম্পর্কে জানান আমি নতুন এসেছি, আমি এসবকিছুই চিনি না। আপনি আগে যেভাবে লিখেছেন সেভাবেই লিখবেন। 
স্থানীয়রা জানান, ফ্লাইওভারের নিচের দখলি জায়গা নিয়ে দৈনিক আদায় করা হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এর ভাগ যায় পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তা পর্যন্ত। ফলে দখলকারীদের দাপটে নানা সমস্যা পোহাতে হয় পথচারী ও এলাকাবাসীকে। এর ওপর কোথাও কোথাও তৈরি করা হয়েছে ভাগাড়, স্থানে স্থানে জমেছে ময়লার স্তূপ। দিনে বা রাতে অনেক জায়গায়ই বসে মাদকাসক্তদের আড্ডা, চলে মাদকের বিকিকিনি, রাতের নির্জনে যৌনকর্মীদের আনাগোনা, সময়ে-অসময়ে অবস্থান নেয় ছিনতাইকারীরা।
নগরবিদরা বলছেন, দখল উচ্ছেদ করে এ অংশটুকু অনায়াসেই শিশুদের বিনোদন ও বড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করা যেত, তাহলে নগরবাসী এ থেকে উপকার পেত। নগরীর এসব ফ্লাইভারের নিচে ঘুরে দেখা যায় দখলের নানান চিত্র। কোনোটার নিচে সারি সারি কক্ষ বানিয়ে বসবাস করছে লোকজন। কোথাও আবার লোহা বা টিনের ব্যারিকেড দিয়ে নির্মাণকাজ চলছে। রাতের বেলায় এসব জায়গায় যৌনকর্মীদের আড্ডাও জমছে। তাছাড়া, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার শনির আখড়া থেকে শুরু হয়ে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে বকশিবাজার পর্যন্ত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার। গুলিস্তান এলাকায় ফ্লাইওভারটির নিচে বাড়িঘর ও দোকান করা হচ্ছে। আর বঙ্গবাজার এলাকায় ঘোড়া রাখার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। মলমূত্র পড়ছে সড়কে। সারি সারি থাকার কক্ষ। এসব কক্ষের বাসিন্দাদের একজন জানালেন, এখানে ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্ট লোকজনসহ নিরাপত্তাকর্মীরা থাকেন ভেতরে ঢুকতে চাইলেই তিনি বলেন, ভেতরে গেলে নাজেহাল হবেন, চোখ খুলে দেখেন-সাধারণ মানুষ প্রবেশ নিষেধ। ছবি তুললে বিরাট সমস্যায় পড়বেন।
এছাড়া বাকি অংশে ফলের দোকান, রিকশাভ্যানের স্ট্যান্ড, চায়ের দোকান, ভাঙারির দোকান রয়েছে। যেসব জায়গা লোহার প্রাচীরে ঘিরে রাখা হয়েছে, সেখানে ভেতরে মাদকাসক্তদের অবস্থানের নানা চিহ্ন। ভাঙারির স্তূপ, বাক্স, ডাবের খোসা, পলিথিন পড়ে আছে। কাপ্তানবাজার অংশে মুরগির খাঁচা ও বর্জ্যরে দুর্গন্ধে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাচলে দম বন্ধ হয়ে আসে। সেখানে ফ্লাইওভারের নিচে বাসচালকদের ক্লাবঘরও গড়ে তোলা হয়েছে। টিকাটুলিতে ফ্লাইওভারের নিচেই ছোট ছোট ট্রাক ও পিকআপ রাখা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ভাতঘর থেকে ছোট্ট গ্যারেজ, ফলের দোকান বা টং-সবকিছু থেকেই চাঁদা তোলা হয়। সবাই জানে, কেউ কিছু বলে না। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা ভাগ পায়। এ ফ্লাইওভার থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নামার পথে নিচে ময়লা-আবর্জনায় ভরা। স্থাপন করা হয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। নিচে ফেলে রাখা হয়েছে গ্যারেজের মালামাল। কোনো স্থাপনাই চাঁদা ছাড়া রাখা যায় না। কখনো কখনো উচ্ছেদ হলেও তা লোক দেখানো। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভাগ বসায়। বঙ্গবাজারসহ ফ্লাইওভারে ঘোড়া রাখার স্থান রয়েছে প্রায় অর্ধশত। এসব স্থান থেকে বছরে ১৬ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন ঘোড়া মালিকরা। এছাড়া ভাতঘর প্রতিদিন ৩০০ টাকা এবং গ্যারেজ প্রতিমাসে ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকা দিতে হয়। ভাঙারি বা পুরোনো যন্ত্রাংশ স্তূপ করে রাখলেও চাঁদা দিতে হয়।
আবার মুরগি বিক্রি করতে হলে প্রতিদিন ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এসব চাঁদা তোলার জন্য নির্দিষ্ট লাইনম্যান রয়েছে। লাইনম্যানরাই চাঁদা তুলেন। চাঁদা দিতে দেরি হলে পুলিশ এসে উচ্ছেদের ভয় দেখায়। মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে থাকা গ্যারেজ থেকে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা উঠানো হয়।
এসব বিষয়ে একজন নগরপরিকল্পনাবিদ জানিয়েছেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ফ্লাইওভারের নিচ এমন করে দখল হয় না। ফ্লাইওভারের নিচে কোনো স্থাপনা থাকতে পারে না। ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচ দুটোই গণমানুষের জন্য। জনগণের সম্পত্তি। কোনো ব্যক্তি, কোনো গোষ্ঠী, কোনো সংস্থার নয়। নিচে যদি কোনো স্থাপনা করতে হয়, তাহলে যাদের সম্পত্তি, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের মতামত নিয়েই করতে হবে। শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা হতে পারে। পুলিশ বক্স বা টয়লেট-পুরোটাই অবৈধ জানান তিনি।

এমএসএম / এমএসএম

স্নায়ু বিকাশ প্রতিবন্ধীদের সুইড বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট

বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী প্রকল্পের মাটি ভরাটের প্রিলেভেল সার্ভে কাজে প্রকল্প পরিচালকের অনিয়ম-দুর্নীতি

মাদারীপুরের আলোচিত মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধার কোটায় একই পরিবারের চারজন করছেন সরকারি চাকরি

নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচী ঘোষণা

মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অফিসার তৌহিদুলের শাস্তি দাবি

বিসিকের প্রকল্প পরিচালক মোঃ রাকিবুল হাসানের ঘুস-দুর্নীতি সমাচার

জমি ক্রয়ের নামে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রবাসি স্বামীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখার সাবেক পরিচালক সাইফুলের টাকার উৎস কি?

নার্গিসকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হোক

গাজীপুর গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকের ঢাকায় ১৯ বছরের লুটপাটের রাজত্ব

মসজিদের নামে জমি দখলের চেষ্টা করছে মল্লিক বিল্ডার্স

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি আবু সুফিয়ান এর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টেন্ডার বাতিল এর অভিযোগ